الأحد، 10 أكتوبر 2021

দশম শ্রেণিতে পড়েই অতিরিক্ত সচিব, অ`স্ত্র নিয়ে চলেন বিলাসবহুল গাড়িতে

 


নাম আব্দুল কাদের মাঝি। পড়াশোনা করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু নিজেকে পরিচয় দিতেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অ’তিরিক্ত সচিব হিসেবে। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি বানিয়েছেন পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড)। ছাপিয়েছেন ভিজিটিং কার্ড। গাড়িতে ব্যবহার করতেন স্টিকার ও ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড।

ভু’য়া এই অ’তিরিক্ত সচিবের জন্ম নোয়াখালী জে’লার সুবর্ণচরের ভূমিহীন কৃষক পরিবারে। তার বাবা জীবিকার সন্ধানে পাড়ি জমান সন্দ্বীপে। উপার্জন করতে থাকেন মাঝিগিরি ও মাছ ধরে। মূলত ভূমিহীন ভাসমান আব্দুল কাদের এখন অ’তিরিক্ত সচিব আব্দুল কাদের চৌধুরী হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে চলেন ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দামের গাড়িতে। গাড়ির কাচে লাগানো থাকে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্টিকার এবং সামনে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড।

গুলশান এক নম্বরের জব্বার টাওয়ারে প্রায় ৬ হাজার বর্গফুটের অফিস আছে তার। কাওরান বাজারেও অফিস আছে তার। মিরপুর ৬ নম্বরে বসবাস করেন। একাধিক ফ্ল্যাট আছে গুলশান ও মিরপুরে। নয়তলা বাড়ি কিনেছেন গাজীপুরের বোর্ডবাজারে, ৮ বিঘার বাগানবাড়ি আছে গাজীপুরের পূবাইলে। অ্যাকাউন্ট আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মা’র্কেন্টাইল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে। অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা। অথচ তার নেই কোনো বৈধ উপার্জন। প্রতারণাই তার মূল পুঁজি। অবশেষে তিনি ধ’রা পড়েছেন গোয়েন্দা জালে।

কাদের ও তার সহযোগীদের বি’রুদ্ধে পল­বী থা’নায় অ’স্ত্র মা’মলা এবং তেজগাঁও থা’নায় প্রতারণার মা’মলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাদেরকে সাত দিনের এবং তার তিন সহযোগীকে তিন দিন করে রি’মান্ডে নেওয়া হয়েছে। পাসপোর্ট জালিয়াতি, প্রতারণা এবং ভু’য়া নিয়োগপত্র দেওয়া কাদের-চক্রের বি’রুদ্ধে ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকটি মা’মলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পু’লিশের (ডিবি) অ’তিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার।

ডিবিপ্রধান হাফিজ আক্তার বলেন, কাদেরকে ধরতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পু’লিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের সব টিম ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কাওরান বাজার, মিরপুর এবং গুলশানে ধারাবাহিক অ’ভিযান চালায়। একপর্যায়ে গ্রে’প্তার করা হয় তাকে। একই সঙ্গে গ্রে’প্তার করা হয় আব্দুল কাদেরের সততা প্রপার্টিজের চেয়ারপারসন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী’ শারমিন চৌধুরী ছোঁয়া, অফিস ম্যানেজার শহিদুল আলম এবং অফিস সহকারী আনিসুর রহমানকে। মিরপুর ৬ নম্বরের বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার মুহূর্তে নিজের প্রাডো গাড়িসহ গ্রে’প্তার হয় আব্দুল কাদের। তার স্ত্রী’কে বাসা থেকে এবং অন্য দুইজনকে গুলশানের অফিস থেকে গ্রে’প্তার করা হয়। গ্রে’প্তারের সময় কাদেরের পকে’টে পাওয়া যায় অ’তিরিক্ত সচিবের ভু’য়া আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড। কাদেরের কোম’রে পাওয়া যায় একটি অ’বৈধ বিদেশি পি’স্তল, ম্যাগাজিন ও এক রাউন্ড গু’লি।

একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, বিতর্কিত ঠিকাদার জিকে শামীম গ্রে’প্তার হওয়ার আগে প্রতারক আব্দুল কাদের গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করতেন। পরে গানম্যান নিয়ে চলাফেরা করা অ’সুবিধাজনক হওয়ায় নিজেই অ’স্ত্র ও ওয়াকিট’কি নিয়ে চলাচল শুরু করেন। গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কাদেরের নামসর্বস্ব কয়েকটি কোম্পানি আছে। এগুলোর মধ্যে আছে ঢাকা ট্রেড করপোরেশন, জমিদার ট্রেডিং, সামীন এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী গ্রুপ, হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশন, সততা প্রপার্টিজ, ডানা লজিস্টিকস, ডানা মোটর্স ইত্যাদি। প্রতারক আব্দুল কাদের বড় ধরনের প্রতারণা করেন হিউম্যান ইমপ্রুভমেন্ট ফাউন্ডেশনের ‘একটি বাড়ি একটি খামা’র প্রকল্প’-এর মাধ্যমে। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে সরকারি অনুদানে বাড়ি এবং খামা’র তৈরি করার নামে শত শত মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এরপর তিনি আবিষ্কার করেন প্রতারণার আরও বেশকিছু খাত।

ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, কাদেরের প্রতারণার অন্যতম একটি খাত হলো বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২০ কোটি বা তদূর্ধ্ব টাকার ঋণ পাইয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে তার মা’র্কেটিংয়ের লাকরা বিভিন্ন ঠিকাদার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অ্যাডভা’র্টাইজমেন্ট করতে থাকে। সম্ভাব্য মক্কেলদের কাছ থেকে প্রথমেই অ’তিরিক্ত সচিব পরিচয়ে কাদের ইন্টারভিউ এবং কনসালটেন্সি ফি গ্রহণ করেন ৫০ হাজার টাকা। প্রোফাইল বানানোর জন্য দেন ২ থেকে ১০ লাখ টাকা। ডাউনপেমেন্ট হিসাবে ৫ থেকে ১০ ভাগ টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। কাউকে ঋণ পাইয়ে দিতে না পারলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতিয়ে নেওয়া টাকার অংশবিশেষ ঋণ হিসাবে দেখাতেন।

তিনি বলেন, প্রতারক কাদের সরকার পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পের শত শত কোটি টাকার ঠিকাদারি পেয়েছেন ভু’য়া কাগজপত্র দিয়ে। কাজ পাওয়ার পর বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার বিক্রি করতেন। এছাড়া ঠিকাদারদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা জামানত রেখে দিতেন। পরে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন ওই টাকা। বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে লোক নিয়োগ দেওয়ার নামেও অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সততা প্রপার্টিজের নামে তিনি জমি এবং স্থাপনা কিনতে নামমাত্র কিছু টাকা বায়না দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করে মানুষকে নানাভাবে হয়’রানি করে টাকা আদায় করতেন। হয়’রানি করে টাকা আদায়ের সময় আব্দুল কাদের বলে থাকেন, বাংলাদেশ সে’নাবাহিনী, বাংলাদেশ পু’লিশ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আমা’র সহকর্মী, বন্ধু এবং অনুজরা কর্ম’রত আছেন। তাই কেউ আমাকে স্প’র্শ করতে পারবে না। এছাড়া তিনি নিজেকে ধনকুবের প্রিন্স মু’সা বিন শমসেরের নিয়োগ করা লিগ্যাল অ্যাডভাইজার হিসাবে পরিচয় দেন। ৩৩ জন সচিবসহ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির সঙ্গে তার কনসোর্টিয়াম, ব্যবসা আছে বলে প্রচার করতেন।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: