الخميس، 7 أكتوبر 2021

সিলেটে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা অক্টোবর-নভেম্বর আসলেই পেঁয়াজের তেলেসমাতি

 


সিলেটের বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত মঙ্গল ও বুধবার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আর গতকাল বুধবার ও এর আগেরদিন মঙ্গলবার সেই পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। নগরীর অনেক পাড়া মহল্লার দোকানে গতকাল পিঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সিলেট কালীঘাটের পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা বলছেন, এই সময়ে দেশি পেঁয়াজের মজুদ কমে আসে। তাই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বর্তমানে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি কম। এছাড়া, পেঁয়াজ অধিক দাম দিয়ে আমদানী করতে হচ্ছে। আবার পাবনা, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মাগুরা, ফরিদপুরসহ যেসব জেলায় পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হয়, সেসব এলাকার হাটে এখন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, যা বাজারে প্রভাব ফেলছে।

হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন বিপাকে। সিলেট বন্দর লালবাজারে মুদি দোকানে পেঁয়াজ কিনতে এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন হুসেন আহমদ নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ১০/১২ দিন আগে ৩০/৩২ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। এই কয়েক দিনে বাড়তে-বাড়তে এখন ৬০ টাকার উপরে পেয়াঁজের কেজি কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এই কয়েক বছর থেকে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস এলেই পেঁয়াজের বাজারে আগুন লেগে যায়। এ বিষয়টা দেখার যেন কেউ নেই।

এদিকে,পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গতকাল বুধবার মদিনা মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকারিয়া কালীঘাটে পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে আসেন। তিনি জানান, পাঁচ-ছয়দিন থেকে প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। দোকানে পেঁয়াজ কম। গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আগাম পেঁয়াজ নিয়ে দোকানে রাখতে হচ্ছে।

কালীঘাটের মেসার্স সুনু মিয়া এন্ড সন্স এর পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী সুনু মিয়া জানান, ভারতের আমদানী এলসি পেঁয়াজ গত সপ্তাহে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা। সেই পেঁয়াজ দু’দিন থেকে পাইকারি বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। তিনি বলেন, ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়া, পূজার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে। ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। মোকামগুলোতে লোডিং কমে গেছে। তবে পূজার পর এমন দাম থাকবে না। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সেগুলো বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে দাম কমে আসবে।

তবে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর এই অজুহাত মানতে নারাজ সাধারণ ক্রেতারা। গতকাল বুধবার খুচরা বাজার থেকে পেঁয়াজ ক্রয় করেছেন এরকম কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা অভিযোগ করেন, বাজারের দিকে সরকারের কোন নজরদারী না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত নিত্য পন্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রনে তারা সরকারকে কঠোর নজরদারী করার দাবি জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। এরমধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। তাই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর থেকে অক্টোবর-নভেম্বরে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। এই সময়ে গত বছর পণ্যটির দাম প্রতি কেজি ১৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে। এর আগের বছর এই সময়ে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, এই সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা।

ফারুক মাহমুদ খান বলেন, তার জানামতে ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে, সেসব দেশ এবছর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেনি। এছাড়া, বড় কোনো সমস্যাও নেই। তাহলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেন ১৮ থেকে ২০ টাকা বাড়বে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের মৌসুম শুরু হয় ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে মুড়িকাটা (আগাম) পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করে। আর মার্চে বীজ থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসে। বলা যায়, এটাই পেঁয়াজের মূল মৌসুম। এ সময় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু অক্টোবর-নভেম্বরের দিকে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমে আসে। এ সময় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিলে এ সমস্যা থাকবে না।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

পেঁয়াজে ভারত নির্ভরতাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) এক গবেষণায় বলেছে, অক্টোবর ও নভেম্বরে পণ্যটির বাজারে সরবরাহ রাখা নিয়ে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। উপকরণ সহায়তা ও সমন্বিত নীতির প্রয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ সংকটকে সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।

সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) রেহেনা আক্তার বলেন, বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পণ্যের নির্ধারিত খুচরা ও পাইকারি বাজার মূল্য লঙ্ঘন করলে জরিমানাও করা হচ্ছে। অধিক মুনাফার জন্য বাজারে যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারেন, সে জন্য বাজারে পর্যবেক্ষণ জোরদার করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: