পানের জন্য সিলেট অঞ্চল বিখ্যাত। বৃহত্তর সিলেটের ৯৫টি খাসিয়া পুঞ্জিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পানের চাষ করা হয়। একসময় যুক্তরাজ্যেও রপ্তানি হতো সিলেটের পান। আসতো বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যের বাজারে সিলেট তথা বাংলাদেশের পান নিষিদ্ধ হয়ে আছে। তবে অবশেষে সুখবর মিলছে। ব্রিটেন বাংলাদেশি পানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে যাচ্ছে। ফলে পান খেয়ে মুখ লাল করবে সে দেশের বসবাসকারী সিলেটিসহ এশিয়ান জনগোষ্ঠী।
দেশটির পান রপ্তানির ইস্যু দেখভলকারী সংস্থা ‘ইউকে- ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি’ (এফএসএ) এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই পানে বহাল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার সুসংবাদ পেতে পারেন দেশের পান রপ্তানিকারকরা।
না ছয় বছর নিষিদ্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশে উৎপাদিত পান ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে রপ্তানির সুযোগ উন্মুক্ত হয়।
পানে ক্ষতিকর ‘সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া’ পাওয়ার পর ছয় বছর ইইউর নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়, যা ধাপে ধাপে ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
ইইউ তার বাজারে আবার পান রপ্তানির সুযোগ পেতে কমিশন কয়েকটি শর্ত প্রতিপালনের তাগিদ দেয়। শর্তগুলো ছিল-পান সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হতে হবে, উৎপাদন থেকে শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইচপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব থেকে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সার্টিফিকেট প্রভৃতি প্রদান করতে হবে।
র সবগুলো শর্ত পূরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এই ইউনিয়নভুক্ত দেশ মোট ২৭টি দেশ। এরা অভিন্ন মুদ্রায় লেনদেন করে এবং এক দেশের পণ্য অন্য দেশে অবাধে যাতায়াত করে। এসব দেশগুলোর বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে ইইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন।
বাংলাদেশের পানের ওপর বহাল থাকা নিষেধাজ্ঞা চলতি বছর মে মাসে তুলে নেয়া হয়েছে ইইউ কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকেই। যা মেনে নিয়েছে সদস্যভুক্ত সবকটি দেশ।
ইইউ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক ব্রেক্সিট নেয়ার পর যুক্তরাজ্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। ফলে বাংলাদেশের পান রপ্তানির ক্ষেত্রে ইইউ কমিশনের সিদ্ধান্ত অন্যরা কার্যকর করলেও যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে সেটি কার্যকর হয়নি।
ন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের বাজারেও পান রপ্তানির সুযোগ চেয়ে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করে বাংলাদেশ।
এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর এসএম জাকারিয়া হক বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে পান রপ্তানির ইস্যুটি দেখভলকারি সংস্থা ‘ইউকে- ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি’ (এফএসএ) এর সিনিয়র ইমপোর্টস স্ট্রাট্যাজি ম্যানেজার অলিভিয়া সিটরনির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ যোগাযোগের পর থেকেই যুক্তরাজ্যের বাজারেও এখন পান রপ্তানির বাঁধা কেটে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হতে শুরু করে।
এর আগে সরকার প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সক্ষমতা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রমাণ দাখিল করে ইইউ কমিশনে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পানে বাংলাদেশের অর্জিত স্ট্যান্ডার্ড এর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে ইইউ কমিশন তার আগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়।
0 coment rios: