الخميس، 30 سبتمبر 2021

‘লাথি মেরে চারতলা থেকে ফেলে দেবো’

 


‘লাথি মেরে চারতলা থেকে ফেলে দেবো’, ‘তোর বাবার চাকরি খেয়ে ফেলবো’, ‘১০ বছরেও ইউনিভার্সিটি থেকে বের হতে পারবে না’, ‘আমার ডিপার্টমেন্টে আমিই গড’, ‘পরীক্ষা দিয়ে যাবা, খাতা ছিঁড়ে ফেলে দেবো’- শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে এভাবেই কথা বলতেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের এ শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। 

 

 

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থীর এমন অভিযোগ করেন।  

তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারাহ নাজ নিঝুম, রাসা, সোহাগ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সুজন বলেন, ওই শিক্ষক আমাদের বাবা-মা এমনকি জন্মের পরিচয় তুলেও গালি দেন। ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলেন। তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলে তিনি পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখান।   

নাজমুল হাসান পাপন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বৈরাচারি আচরণ করেন। তিনি এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের ভয় দেখান। নিজের বাবা আর্মি অফিসার দাবি করে শিক্ষার্থীদের বাবার চাকরি খেয়ে ফেলারও হুমকি দেন তিনি। ওনার কাছে কেউ নিরাপদ নয়। অপমান সইতে না পেরে তুহিন নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। এ কারণেই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছে। দীর্ঘদিনের নির্যাতনে ছাত্ররা ফুঁসে উঠেছে।  

আবিদ হাসান নামে এক ছাত্র বলেন, স্টুডেন্টদের তিনি সন্তানের চোখে দেখেন না। আমাদের ওপর তার কর্তৃত্ব দেখান। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তার সিদ্ধান্তগুলো সব সময়ই অমানবিক হয়।  
 
শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়া প্রসঙ্গে আবিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন পর পরীক্ষা শুরু হয়। তিনি পরীক্ষার তিন/চারদিন আগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রুটিন দিয়েছেন, যেখানে প্রতিদিনই পরীক্ষা রয়েছে। একটি বছরের ফাইনাল পরীক্ষা প্রতিদিন দিতে হবে- এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত দেন তিনি। ওই রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ওই শিক্ষিকা স্মারকলিপি দিতে আসা শিক্ষার্থীদের নাম সংগ্রহ করেন। শনিবার পরীক্ষার হলে গিয়ে পুরো চার ঘণ্টা তিনি সে শিক্ষার্থীদের মেন্টালি টর্চার করেছেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে পরদিন আবার তারা কথা বলতে চাইলে শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেন তিনি। যারা এ স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিল, ঠিক তাদেরই চুল কাটা হয়।  

সুজন নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, ক্লাসের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের আক্রমণ করে। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তিনি নানা রকম কথা বলেন।  

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র শামীম হোসেন ও আবু জাফর বলেন, ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার যোগ্য নন। মানসিক বিকারগ্রস্থ ও উগ্রমেজাজি এ শিক্ষকের কাছে কেউই নিরাপদ নয়।  

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রিফাত রহমান শাকিল বলেন, ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড মেনে চলার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর। তবে খারাপ আচরণের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা কখনো কোনো অভিযোগ দেয়নি।  আমাদের নজরে পড়লেও সেটাকে গুরুত্ব দেইনি। কারণ ভেবেছি, হয় তো বা চুপিসারে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভালো আচরণও তিনি করবেন।  

রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেল বলেন, চুল কেটে দেওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে শুধু একটি বিভাগের অভিযোগ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগেই এমন অভিযোগ রয়েছে। জুতোর শব্দ হলেও তিনি শিক্ষার্থীদের শাসন করেন। সব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। দু-একদিনের মধ্যেই এ বিষয়গুলো জানা যাবে।  

এসব বিষয়ে জানতে ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে একাধিক মিডিয়ায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি চুল কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, আমার একটু রাগ রয়েছে। পরীক্ষার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের বকাঝকা করি।  

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বলেন, রবি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছেন। চুল কেটে দেওয়ার ঘটনাটি তদন্তে রবির রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস হিমেলকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১

 

 

 


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: