শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সন্তানকে লিখে দিয়েছেন কোটি টাকার সম্পদ, তবুও মা-বাবার ঠাঁই গোয়াল ঘরে

 

 

সন্তানের জন্য তো কত ত্যাগই স্বীকার করেন বাবা-মা। ব্যতিক্রম ছিলেন না ঠাকুরগাঁওয়ের নগেন চন্দ্র বর্মনও। একসময় সন্তানকে লিখে দিয়েছিলেন পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি। সেই সন্তানই বাবা-মাকে বের করে দিয়েছে বাড়ি থেকে। এখন নগেন দম্পতি অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন গোয়ালঘরে।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুবাড়ি গ্রামের নগেন চন্দ্র বর্মণের বয়স প্রায় ৭০ বছর ও স্ত্রী বিজয়া বালার বয়সও প্রায় ৬০ বছর। বয়সের ভারে তেমন ভারি কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না এই দম্পতি। একসময় নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা না করে অনেক কষ্টে চার ছেলে ও এক মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুললেও সেই প্রতিষ্ঠিত সন্তানেরা বৃদ্ধ পিতা মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে নারাজ। নিজের শেষ সম্বল দুটি বড় পুকুরসহ ১৪ বিঘা জমি আদরের ছোট ছেলে স্কুল শিক্ষক গণেশকে লিখে দেন নগেন। কিন্তু ছোট ছেলে গণেশও বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতি বাজে আচরণ করতে থাকেন।

বৃদ্ধ বাবা মাকে কিছু দিন বাটখারা দিয়ে মেপে মেপে ভাত খেতে দিলেও গত এক সপ্তাহ ধরে তা বন্ধ করে দিয়েছে। উল্টো বাবা মাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় ছেলে স্কুল শিক্ষক গণেশ ও তার স্ত্রী। তাই বৃদ্ধ নগেন ও তা স্ত্রী বিজয়া বালার ঠাঁই হয়েছে এখন গোয়ালঘরের বারান্দায়।

বৃদ্ধ এই দম্পতির অভিযোগ, নিজের সর্বস্ব সন্তানদের দেয়ার কারণে এই করুণ পরিণতি তাদের। কোনো সন্তানই তাদের দায়িত্ব নিচ্ছেন না। তাই যত দিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ভরণ-পোষণ চান সন্তানদের কাছে। এ বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তারা।

এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি এবং সহযোগিতা কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী। আর গণেশ চন্দ্র বর্মন, নগেনের অভিযুক্ত ছেলে জানালেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে কিছুই বলতে চান না তিনি।

বৃদ্ধ পিতা মাতার গোয়াল ঘরে গরুর সাথে থাকা অমানবিক। এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তিনি জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সমাজের প্রতিটি পরিবারেই এমন ঘটনা ঘটছে।

এদিকে ইউএনও জানান, বৃদ্ধ দম্পত্তির অভিযোগ মিথ্যা বলে তাকে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি বললেন, তবে বাবা মা অভিযোগ করলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন লঙ্ঘন করার শাস্তি অনুর্দ্ধ এক লক্ষ টাকা জরিমানা। অনাদায়ে অভিযুক্তের তিন মাস কারাদণ্ডও হতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাবা মায়ের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত ও সন্তানদের বাবা মায়ের সঙ্গে বসবাস বাধ্যতামূলক করার বিধান করে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে আইন পাস করলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না। অথচ আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সন্তানকে বাবা মায়ের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: