সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০২১

খাবার না পেয়ে সব ছবি ডিলিট করে দিলেন বিয়ের ফটোগ্রাফার!


 

দিনভর খেটেখুটে বিয়ের ছবি তুলছিলেন এক ফটোগ্রাফার। প্রচণ্ড গরম সহ্য করে লোকজনের ভিড়ে কাজ ঠিকঠাকই করছিলেন। কিন্তু ঝামেলা বাঁধে খাবার নিয়ে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় চোখে অন্ধকার দেখছিলেন সেই ফটোগ্রাফার, চাচ্ছিলেন কিছু খেয়ে আবার কাজ শুরু করবেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি বর। রূঢ় ভাষায় ছবি তোলা চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দেন তিনি। তাতেই ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায় ফটোগ্রাফারের। বরের সামনেই সব ছবি ডিলিট (মুছে ফেলা) করে সোজা বেরিয়ে যান তিনি।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রেডিটে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সেই ফটোগ্রাফার। তিনি লিখেছেন, প্রকৃতপক্ষে আমি কোনো ফটোগ্রাফার নই। আমি কুকুর পরিচর্যাকারী। আমি আমার ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার জন্য সারাদিন কুকুরের ছবি তুলি। এটিই আমার কাজ। আমি খুব কমই অন্য জিনিসের ছবি তুলি।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এক বন্ধু বিয়ে করেছে। সে টাকা বাঁচাতে চাচ্ছিল। এ জন্য জিজ্ঞেস করেছিল, আমি তাদের ছবি তুলবো কিনা। জবাবে বলেছিলাম, আমি এতে খুব একটা দক্ষ নই। কিন্তু সে আমাকে বলে, ছবি নিখুঁত হোক বা নাহোক তাতে তার পরোয়া নেই। তাদের বাজেট ছিল ছোট। এ কারণে আমি ২৫০ ডলারে (২১ হাজার ৪০০ টাকা প্রায়) ছবি তুলে দিতে রাজি হই, যা ১০ ঘণ্টার অনুষ্ঠানের জন্য কিছুই নয়।

ভুক্তভোগী বলেন, বিয়ের দিন আমি নববধূর পেছন পেছন ঘুরে বেড়িয়েছি। সে অনুষ্ঠানের আগে এখানে-সেখানে যাচ্ছিলো। তার যাওয়া-আসার পথে আমি ছবি তুলছি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তৃতাসহ গোটা অনুষ্ঠানে মানুষজনের ছবি তুলেছি।

ফটোগ্রাফার জানান, আমি বেলা ১১টা থেকে কাজ শুরু করেছিলাম, শেষ হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে। বিকেল ৫টার দিকে খাবার দেওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু আমাকে বলা হয়, আমি খেতে পারবো না, কারণ আমাকে ফটোগ্রাফার হতে হবে। প্রকৃতপক্ষে, তারা আমার জন্য কোনো টেবিলে জায়গাও রাখেনি। আমি ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম এবং সেই মুহূর্তে কাজটি নেওয়ার জন্য অনুতাপ হচ্ছিলো। জায়গাটি ছিল অবিশ্বাস্য গরম, তাপমাত্রা মনে হচ্ছিলো ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি), আর কোনো এসিও ছিল না।

আমি বরকে বললাম, আমাকে খাবার ও পানিপানের জন্য ২০ মিনিট থামতে হবে। সেখানে কোনো বার খোলা বা কিছু ছিল না, আমি পানিও পাচ্ছিলাম না। সঙ্গে যে দুটি পানির বোতল নিয়ে গিয়েছিলাম, তা অনেক আগেই খালি হয়ে গেছিলো। সেই সময় বর আমাকে বললো, আমাকে ফটোগ্রাফার হতে হবে অথবা বিনাপারিশ্রমিকেই চলে যেতে হবে।

গরমের ভেতর ক্ষুধার্ত অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত ছিলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সে (বর) নিশ্চিত কিনা। জবাবে সে হ্যাঁ বলে। তাই তার সামনেই সব ছবি ডিলিট করে দেই এবং বলি, আমি আর তার ফটোগ্রাফার নই।

সত্যি বলতে, যদিও আমাকে ২৫০ ডলার দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই সময় আমি এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আর কোথাও পাঁচ মিনিট বসার জন্যই ২৫০ ডলার দিয়ে দিতাম।

পোস্টের শেষাংশে সেই ফটোগ্রাফার জিজ্ঞেস করেছেন, আমি কি বোকামি করেছি? তিনি আরও জানিয়েছেন, এ ঘটনার পর ওই নবদম্পতি হানিমুনে যায়, কিন্তু তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বিরত ছিল। এ জন্য অনেকেই তাদের ওয়ালে পোস্ট করে জানতে চেয়েছেন, ছবি কোথায়?

ওই রেডিট ব্যবহারকারীর পোস্টটি এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনদের অনেকেই এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজন ফটোগ্রাফারের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, তারা (নবদম্পতি) ডিসকাউন্ট চেয়েছে, কিন্তু আপনার জন্য খাবারটুকু রাখেনি? এসব ‘বন্ধুর’ চেয়ে কুকুরই ভালো।

আরেকজন লিখেছেন, যদি কাউকে খাবার, পানি, এমনকি বিশ্রামের বিরতি না দেন, তাহলে আপনি অবশ্যই তার বন্ধু নন এবং সেই ডিসকাউন্টেরও যোগ্য নন।

তৃতীয় আরেক ব্যবহারকারী অবশ্য বলেছেন, ছবিগুলো ডিলিট করা উচিত হয়নি। তার (ফটোগ্রাফার) উচিত ছিল চলে যাওয়া এবং পরে যখন সেই বন্ধু ছবির কথা জিজ্ঞেস করতো, তখন বলতো, সেগুলো দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করবে।





শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: