বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সিসিকের দাবি ৪৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ চায় ২৫ কোটি

 


 

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ৪৫ কোটি টাকা দাবি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড (ভূগর্ভস্থ) তার বসাতে গিয়ে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্কার বাবদ এই টাকা দাবি করেছে সিসিক। অন্যদিকে, সিসিকের কাছে বকেয়া বিল বাবদ ২৫ কোটি টাকা চাইছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বকেয়া বিল জমতে জমতে ৩৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছিল। চলতি বছর দুই ধাপে ১০ কোটি টাকাo  পরিশোধ করে সিসিক। বাকি টাকার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চাপ আছে সিসিকের উপর।

 

 সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সাড়ে ১৪ কিলোমিটার বিদ্যুতের আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল (ভূগর্ভস্থ তার) স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ বিদ্যুতায়ন ও মাটির উপরস্থ তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেতে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। আগামীতে আরও ২৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করা হবে নগরীতে।

সিসিক বলছে, সাড়ে ১৪ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক তার স্থাপনে খুড়াখুড়ির কারণে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কারে সবমিলিয়ে সিসিকের ব্যয় হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। যেহেতু কাজ করেছে পিডিবি, সেহেতু সংস্কারের এই টাকা তাদেরই দেওয়ার কথা।

এই ৪৫ কোটি টাকা চেয়ে সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে সিসিক।

জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস্তার অনেক ক্ষতি হয়। রাস্তা মেরামত করেছি আমরা। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ৪৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।’

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ বকেয়া বিল বাবদ সিসিকের কাছে ২৫ কোটি পাবে। বছরের পর বছর ধরে বিল বকেয়া হতে হতে এই টাকার পাহাড় জমেছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিতরণ অঞ্চল সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির সিলেটভিউকে জানান, ওয়ান-ইলেভেনের (সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সময় সিসিক কর্তৃপক্ষ বিদ্যুতের সকল বকেয়া পরিশোধ করেছিল। এরপর থেকে বিল বকেয়া রাখতে শুরু করে সিসিক। বার বার তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠালেও বিল সব পরিশোধ করা হয়নি। সিসিক অর্থ সংকটের কথা বলে।

সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘বিদ্যুতের বকেয়া ৩৫ কোটি টাকা ছিল। এ বছর ১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ গেল জুনে ৫ কোটি টাকা দেওয়া হয় বিদ্যুৎকে। বর্তমানে তারা ২৫ কোটি টাকা পাবে সিসিকের কাছে।’

নূর আজিজ জুনে পাঁচ কোটি টাকা পরিশোধের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে মে মাসে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৩ টাকা পরিশোধ করে সিসিক।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা আবদুল কাদির অতি সম্প্রতি সিলেটভিউয়ের সাথে আলাপকালে সিসিকের কাছে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ৩৫ কোটি টাকা বলে উল্লেখ করেন।

তবে পিডিবির বিতরণ অঞ্চল সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটভিউকে বলেন, ‘আসলে হিসেবে একটু গড়বড় হয়ে গেছে। ৩৫ কোটি ছিল আগে, তারা (সিসিক) ১০ কোটি পরিশোধ করেছে। এখন বকেয়া ২৫ কোটি টাকা। অবশ্য সিলেট মহানগরীর সব থানা এলাকা মিলিয়ে ৩৫ কোটি টাকার মতো বকেয়া আছে।’

সিলেট মহানগরীতে ছয়টি থানা আছে। এসব থানার আওতাভুক্ত সকল এলাকা সিসিকের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। সম্প্রতি সিসিকের আয়তন বাড়ায় এসব এলাকা অন্তভূর্ক্ত হয়েছে। তবে নতুন অন্তর্ভূক্ত এলাকায় এখনও সিসিকের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

বিদ্যুতের বকেয়া বিষয়ে আরও জানতে সিলেটভিউয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (হিসাব) বিধু ভূষণ চক্রবর্তীর সাথে। তিনি বিষয়টি নিয়ে পিডিবির বিতরণ অঞ্চল সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিমের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিসিকের কাছে বিদ্যুতের বড় অঙ্কের বিল বকেয়া। আমরা তাদেরকে বিল পরিশোধের জন্য বার বার তাগিদ দিচ্ছি।’

সিসিকের ৪৫ কোটি টাকা পাওনা দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনারা যে টাকা দাবি করেছেন, সেটা সাম্প্রতিক আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল টানা কাজের। আর বিদ্যুতের বকেয়া কিন্তু অনেক আগের।’

এদিকে, সিসিকের দাবিকৃত ৪৫ কোটি টাকা এবং বিদ্যুতের পাওনা ২৫ কোটি টাকার মধ্যে সমন্বয় করা যায় কিনা, সে আলোচনাও চলছে।

এ প্রসঙ্গে সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা সমন্বয় করতে চাই। এখন তাদের দিক থেকেও সাড়া আসতে হবে।’

পিডিবির বিতরণ অঞ্চল সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম বলেন, ‘সমন্বয়ের বিষয়টি উপর মহলের বিষয়। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে হবে।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: