বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মিলছে না আশানুরূপ ইলিশ, প্রভাব বাজারে

ইলিশের ভরা মৌসুম হলো বর্ষাকাল। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। তবে এ বছর আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়েনি। বাজারে ইলিশও ছিল কিছুটা কম। একই সঙ্গে অভিযোগ রয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশে ইলিশ পাচারের। ফলে বাড়তি দামসহ সার্বিক প্রভাব পড়েছে ইলিশের বাজারে।

ইলিশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বাজারে ইলিশ অনেক কম। শুধু নদীতেই নয় উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র দুটোতেই ইলিশ কম। দুই বছরের করোনা পরিস্থিতিতে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের ঢিলেঢালা দায়িত্বপালনের কারণে প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন হয়েছে। এই দুই বছর জাটকা শিকারের কারণে যত জেলে ধরা পড়েছেন তাদের অধিকাংশকে আংশিক জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ায় তারা পুনরায় জাটকা নিধন করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া নদীতে পলির আধিক্য, স্রোতহীনতা, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণসহ নানা কারণে ইলিশের গতিপথ প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। ইলিশ বাজারে কম আসায় দামও কিছুটা বেশি।

 

জানা গেছে, অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছর একই সময় বাজারে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বর্তমানে চাঁদপুরের স্থানীয় বাজারে ১ কেজি থেকে ১২০০ গ্রামের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, একই ওজনের ভোলা-বরিশালের ইলিশ এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেড় কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ থেকে সাড়ে ১ হাজার ৪০০ টাকা, মিঠাপানির মাঝারি সাইজের তাজা ইলিশের দাম কেজিপ্রতি এক হাজার টাকা এবং একই সাইজের বরিশাল অথবা উপকূলীয় এলাকার মাছের দাম সাড়ে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে ইলিশ। প্রায় ৬ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। সীমান্তের দুই পাশেই বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা ইলিশ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার কূটনীতির অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিরোধিতা করার পর ২০১২ সালে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো রয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে প্রচুর চাহিদার কারণে ইলিশের দামও ঠেকেছে আকাশে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার রুপিতে বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এর জেরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ইলিশ পাচার হচ্ছে ভারতে। কলকাতায় পৌঁছানো বেশিরভাগ ইলিশ যাচ্ছে নদীপ্রধান আঙ্গরাই-হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি সীমান্ত দিয়েও পাচার হচ্ছে কিছু ইলিশ। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাদের একটি সীমান্তচৌকিতে বিপুল পরিমাণ ইলিশ জব্দ করেছে।

 

 

এদিকে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ৫২ প্রতিষ্ঠানকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ মেট্রিক টন করে মোট ২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ইলিশ পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুরের আড়তদার মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. গিয়াস উদ্দিন খান বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, সীমান্ত দিয়ে ইলিশ যাচ্ছে, আজও হয়তো গেছে। এগুলো নিশ্চয়ই কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমেই হয়। আনঅফিসিয়ালি আগে থেকেই যাচ্ছে এবং যায়। এর ফলে দেশের বাজারে ইলিশের দামে প্রভাব পড়ে।

তিনি বলেন, ভারতে তো অফিসিয়ালি, আনঅফিসিয়ালি ইলিশ মাছ যাচ্ছে। ইলিশ রপ্তানি তো নিষিদ্ধ, সেখানেও দুর্নীতি আছে। পূজার জন্য ৫২ প্রতিষ্ঠান ইলিশ ভারতে রপ্তানি করতে পারবে। ইতোমধ্যে তারা বাজার থেকে মাছ কিনতে শুরু করেছে। ঘটনা হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুই হাজার টন মাছ দেবে, আগের বছরগুলোতে যা ছিল আরও কম। ইলিশ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ভারতের পার্টিগুলো কতো টন মাছ নিচ্ছে সেটি নজরদারিতে রাখা উচিত। তারা কী দুই হাজার টনের জায়গায় ২০ হাজার টন নিচ্ছে কি-না সেদিকে নজর রাখা হয় না। আমি গত দুই বছরে দেখেছি, ভারতের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান মাছ কিনে তারা চাঁদপুর, বরিশাল, ঢাকার কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মাছ কিনেছে। ফলে সেটি নজরদারির আওতায় আনা উচিত।

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে এই সময় ইলিশ একটু কম ধরা পড়ছে। চর-ডুবোচর, নাব্যতা সঙ্কটের জন্য প্রধান নদ-নদীতে অন্যান্য বছর যেভাবে ইলিশ এসেছে এ বছর সেভাবে ইলিশ আসছে না এটা ঠিক। কিন্তু গভীর সমুদ্রে এভেইলেবলিটি আছে। কিন্তু প্রধান নদ-নদীতে না আসার কারণে এ রকম একটা আলোচনা আসছে। অমাবস্যা-পূর্ণিমা আসছে, এ সময় কিন্তু তারা ডিম ছাড়ার জন্য এদিকে আসবে বলে আশা করা যায়। তাই সেভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: