রবিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২১

বিচারের জন্য এখনও রাস্তায় ঘুরছেন রায়হানের মা-স্ত্রী

 


সিলেটে পু’লিশ হেফাজতে রায়হান আহম’দের মৃ’ত্যুর এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। চাঞ্চল্যকর এই হ’ত্যাকা’ন্ডের একবছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি বিচার কাজ। করোনা সংক্রমণের কারণে মা’মলার কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে ধীর গতি।

এই ঘটনায় দায়ের করা পু’লিশের বিভাগীয় মা’মলার ত’দন্তও শেষ হয়নি গত বছরেও।

মা’মলা আর ত’দন্ত কার্যক্রমে এই ধীরগতিতে হতাশা দেখা দিয়েছে রায়ানের পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। বিচারের দাবিতে এখনও রাস্তায় ঘুরছেন তারা। এক বছর পূর্তির আগেরদিন রোববার বিকেলে রায়হানের মা ও স্ত্রী’ এই হ’ত্যাকা’ন্ডের বিচার দাবিতে একটি মানববন্ধনে অংশ নেন। এসময় রায়হানের দেড় বছর বয়সী শি’শুকন্যা আলফাকেও নিয়ে আসেন তারা।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রায়হান হ’ত্যার বিচার কাজ দুত সম্পন্নের দাবি জানান রায়হানের মা সালমা বেগম ও স্ত্রী’ তাহমিনা আক্তার তান্নি।

সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহম’দ (৩৩) কে গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে তুলে নিয়ে আসে সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ি পু’লিশ। সেখানে তাকে রাতভর নি’র্যা’তন করা হয় বলে অ’ভিযোগ পরিবারের। পরদিন ১১ অক্টোবর সকালে মা’রা যান রায়হান। রায়হান সিলেট নগরের স্টেডিয়াম মা’র্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারি হিসেবে কাজ করতেন।

রায়হানের মৃ’ত্যুর ঘটনা ‌প্রথমে ‘ছিতনতাইকারী স’ন্দেহে গণপি’টুনিতে মৃ’ত্যু’ বলে প্রচার করে পু’লিশ। তবে রায়হানের পরিবার প্রথম থেকেই নি’র্যা’তনে হ’ত্যার অ’ভিযোগ করা হচ্ছে। সিলেট মহানগর পু’লিশের প্রাথমিক ত’দন্তেও নি’র্যা’তনের প্রমাণ মিলেছে।

এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর পু’লিশি হেফাজতে মৃ’ত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রী’র তান্নি বাদি হয়ে সিলেট কতোয়ালি থা’নায় একটি মা’মলা দায়ের করেন।

গত ৫ মে মা’মলার ত’দন্তকারী সংস্থা পু’লিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ৫ পু’লিশ সদস্যসহ ৬ জনকে অ’ভিযু’ক্ত করে অ’ভিযোগপত্র প্রদান করে। সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আ’দালত এই অ’ভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। তবে এখনও বিচারকাজ শুরু হয়নি।

এদিকে, মা’মলার পর মহানগর পু’লিশের পক্ষ থেকে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ত’দন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নি’র্যা’তনের সত্যতা পায়।

ত’দন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা পু’লিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত এবং তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রে’প্তার করে মা’মলার ত’দন্তকারী সংস্থা পিবিআই। তবে প্রধান অ’ভিযু’ক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পু’লিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভা’রতে চলে যান। গত বছরের ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রে’প্তার করা হয়।

একবছরেও শেষ হয়নি বিভাগীয় মা’মলার ত’দন্ত
পু’লিশ সূত্রে জানা গেছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পরপরই আকবরসহ পাঁচ পু’লিশ ও সিলেট কোতোয়ালি থা’নায় মা’মলার প্রথম ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা এসআই আবদুল বাতেনসহ ৯ জনের বি’রুদ্ধে ৯টি বিভাগীয় মা’মলা হয়। এ মা’মলার ত’দন্ত একবচরেও শেষ হয়নি। বছর গড়িয়েছে। বিভাগীয় মা’মলা চলা ৯ পু’লিশ সদস্যের মধ্যে ৫ জন রায়হান হ’ত্যা মা’মলার অ’ভিযোগপত্রভুক্ত আ’সামি। এসআই আবদুল বাতেন, এএসআই কুতুব আলী ও দুজন কনস্টেবল সাময়িক বরখাস্ত আদেশে মহানগর পু’লিশ লাইনসে সংযু’ক্ত আছেন।

বিভাগীয় মা’মলার ত’দন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিআরবি (পু’লিশ আইন) অনুযায়ী, কোনো পু’লিশ সদস্য অ’প’রাধমূলক কাজে জড়ালে তার বি’রুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শা’স্তির (লঘু-গুরু) বিধান আছে। গুরুদ’ণ্ডের আওতায় চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত। লঘুদ’ণ্ডে শুধু দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার বা পদাবনতি। বিভাগীয় মা’মলায় অ’ভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ পু’লিশ সদস্যদের মধ্যে শুধু আকবর গুরুদ’ণ্ডে দ’ণ্ডিত হতে পারেন বলে ত’দন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

হ’ত্যা মা’মলায় অ’ভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচ পু’লিশ সদস্যের মধ্যে চলতি মাসে শুধু আকবরের বিষয়ে ত’দন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। আরও বাকি চারজনের ত’দন্ত চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ব্যাপারে রোববার জানতে চাইলে সিলেট মহানগর পু’লিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, পু’লিশের বিভাগীয় ত’দন্ত কার্যক্রম ফৌজাদারি মা’মলার মধ্যে নেই। এর মাধ্যমে পু’লিশের অভ্যন্তরীণ ত’দন্ত করা হচ্ছে। অ’ভিযু’ক্ত ব্যক্তিদের বি’রুদ্ধে যে অ’ভিযোগগুলো আসছে, সেগুলো বিশ্লেষণ ও ত’দন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পু’লিশ ও সাধারণ মানুষও রয়েছে। এ ছাড়া অ’ভিযু’ক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বি’রুদ্ধে ত’দন্ত প্রতিবেদন পু’লিশ বিভাগেই পাঠানো হবে। পরে বিভাগীয় আইন অনুযায়ী তাদের শা’স্তি দেওয়া হবে।

মা’মলার পরবর্তী তারিখ ২ নভেম্বর
ঘটনার সাত মাসের মা’থায় গত ৫ মে মা’মলার ত’দন্তকারী সংস্থা পু’লিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আ’লোচিত এ মা’মলার অ’ভিযোগপত্র আ’দালতে জমা দেয়। অ’ভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পু’লিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রধান আ’সামি করা হয়। অন্য অ’ভিযু’ক্ত ব্যক্তিরা হলেন এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন অর রশিদ, টিটু চন্দ্র দাস, ফাঁড়ির টুআইসি পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন ও এসআই আকবরের ‘বন্ধু’ কোম্পানীগঞ্জ উপজে’লার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।

আ’দালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, করো’না পরিস্থিতির কারণে চার মাস পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর আ’দালতে অ’ভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এরপর অ’ভিযোগপত্র গঠনের শুনানির জন্য আ’দালত আগামী ২ নভেম্বর তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন মা’মলার অ’ভিযোগপত্রভুক্ত একমাত্র আ’সামি আবদুল্লাহ আল নোমানের বি’রুদ্ধে গ্রে’প্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

আগামী ২ নভেম্বর মা’মলার ধার্য তারিখে পলাতক আ’সামির গ্রে’প্তারি পরোয়ানা তামিল করার বিষয়টি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আ’দালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সৈয়দ শামীম আহম’দ। তিনি বলেন, অ’ভিযোগপত্র দাখিল করার পর স্বাভাবিকভাবে এত দিনে বিচার কার্য শুরু হতো। তবে করো’না পরিস্থিতির কারণে বিলম্বিত হয়েছে।

শঙ্কিত পরিবার

রায়হান হ’ত্যার বছর পূর্ণ হবার আগেরদিন রাস্তায় নেমে বিচারকাযে বিলম্ব হওয়ার জন্য হতাশা প্রকাশ করেছন তার মা সালমা বেগম ও স্ত্রী’ তাহমিনা আক্তার তান্নি এবং পরিবারের সদস্যরা। সেই সঙ্গে খু’নিদের ফাঁ’সি দাবি করেছেন তারা।

রবিবার নগরীর চৌহাট্টাস্থ শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সালমা বেগম ও তাহমিনা আক্তার তান্নিসহ রায়হানের পরিবারের সদস্যরা।

মানববন্ধনে বক্তৃতাকালে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আ’সামিরা গ্রে’প্তার হলেও মা’মলার চার্জশিট দিতে অনেকে দেরি হয়েছে। এতে আম’রা কিছুটা হতাশ। প্রয়োজনে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মা’মলা হস্তান্তর করে মা’মলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করা হোক এবং আ’সামিদের দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তি প্রদান করা হোক।

মানববন্ধনে উপস্থিত রায়হানের স্ত্রী’ তাহমিনা আক্তার তান্নি বলেন, আমা’র স্বামীর খু’নিদের সহায়তাকারী নোমান এখনও গ্রে’প্তার হয়নি। সে যে দেশেই থাকুক না কেন, তাকে সে দেশের প্রশাসনের সহায়তায় দ্রুত গ্রে’প্তার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: