স্বাধীনতাত্তোর দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ। সরকার বলছে, চাল উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে বাংলাদেশ। তবু প্রতিবছর থাকছে ঘাটতি। দামও থাকছে বলা যায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। আমদানিনির্ভরতাও এখনো কাটেনি। তাই স্বয়ংসম্পূর্ণতার এ সুখবর অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ কত? কৃষি মন্ত্রণালয় উৎপাদন বৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল কতটুকু? বিশ্লেষকেরা বলছেন, চালের উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের দেওয়া তথ্যে রয়েছে ফাঁকফোকর।
বিষয়টি উঠে এসেছে সম্প্রতি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের কথায়ও। প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, সরকারের কৃষিখাত সংশ্নিষ্টরা চাল উৎপাদনের যে তথ্য দেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ধরে হিসাব করলে দেশে বছরে দুই কোটি ৮০ লাখ টনের বেশি চালের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মোট উৎপাদন এর চেয়ে অনেক বেশি।
‘উৎপাদন যদি চাহিদার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এত চাল গেলো কোথায়? কেন আমদানি করতে হচ্ছে’- প্রশ্ন প্রতিমন্ত্রীর।
তবে
এ নিয়ে কৃষি সংশ্লিষ্টদের পরিষ্কার কোনো যুক্তি-ব্যাখ্যা নেই। তারা বলছেন,
প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাতে চালের উৎপাদন কম-বেশি হচ্ছে। এছাড়া উৎপাদন
পরবর্তী প্রচুর ধান-চাল নষ্ট হয়। প্রতি বছর উৎপাদিত ধান-চাল যে পরিমাণে
নষ্ট হয়, তা কমানো গেলে চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ৬৭ লাখ টন চাল নষ্ট হয়। এ ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা গেলে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন বাড়তি চাল পাওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে এ পর্যন্ত বার্ষিক সর্বোচ্চ চাল আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯ লাখ টন। এবছরও প্রায় ৩০ লাখ টন চাল আমদানি করছে সরকার। এরমধ্যে আগে এসেছে ১৩ লাখ টন। নতুন করে ১৭ লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন। সে অনুযায়ী উৎপাদিত ধান-চাল নষ্ট হওয়ার মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব হলে প্রকৃতপক্ষেই চালে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতো দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন